ভারতে একটি হত্যা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি ও ‘মাফিয়া ডন’ দাউদ ইব্রাহিমের ঘনিষ্ঠ সহযোগী আবদুর রউফ ওরফে দাউদ মার্চেন্ট ঢাকা কেন্দ্রীয় কারগার থেকে ছাড়া পেয়েছেন রোববার বিকেলে। তবে এরপর থেকে তিনি কোথায় রয়েছেন—সে বিষয়ে কেউ প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন না।অবশ্য কারাগারের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, মুক্তির আনুষ্ঠানিকতার পর কয়েকজন ব্যক্তি কারা ফটক থেকেই দাউদ মার্চেন্টকে গাড়িতে তুলে নিয়ে গেছে।এ ব্যাপারে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ‘দাউদ মার্চেন্টের সাজার মেয়াদ শেষ। স্বাভাবিক আইনি প্রক্রিয়ায় সে কারাগার থেকে ছাড়া পেয়েছে। এখন ভারতীয় নাগরিককে কিভাবে দেশে ফেরত পাঠানো হবে, সেটা দেখবে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ।’দাউদ মার্চেন্টের মুক্তির বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে সোমবার সকালে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তবে ফেরারি এই আসামিকে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে কি-না—সে বিষয়ে মুখ খোলেননি তিনি।এদিকে, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবির বলেন, ‘দাউদ মার্চেন্টের মুক্তির বিষয়ে আদালতের কাগজপত্র রোববার বিকেলে কেরাণীগঞ্জের কারাগারে পৌঁছে। যাচাই-বাছাই শেষে তাকে বিকেলে সাড়ে ৪টার দিকে ছেড়ে দেওয়া হয়।তিনি আরও বলেন, ‘অন্যান্য আসামিরা যেভাবে ছাড়া পান একইভাবে দাউদ মার্চেন্ট ছাড়া পেয়েছেন। কারাগার থেকে ছাড়া পেয়ে কে, কোন দিকে যায়—সেটা সব ক্ষেত্রে জানা সম্ভব নয়।’ছেড়ে দেওয়ার পর দাউদ মার্চেন্টকে কেউ গ্রহণ করেছে কি-না—এমন প্রশ্নের জবাবে কারা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আদালতের নির্দেশে কোনো আসামিকে মুক্তি দেওয়ার পর সে কোথায় যায় বা কেউ তাকে গ্রহণ করে কিনা—তা কারা কর্তৃপক্ষের জানার বিষয় নয়।১৯৯৭ সালের ১২ আগস্ট মুম্বাইয়ের সঙ্গীত প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ‘টি-সিরিজের’ কর্নধার গুলশান কুমারকে গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয়। ওই হত্যা মামলায় ভারতীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দাউদ মার্চেন্টকে গ্রেফতারের পর ২০০২ সালে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় দেশটির আদালত। এরপর সেই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন তিনি। ২০০৯ সালে মায়ের মৃত্যুতে ১৪ দিনের প্যারোলে মুক্তি পাওয়ার পর পালিয়ে যান দাউদ মার্চেন্ট। একই বছরের ২৮ মে সীমান্তবর্তী ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এক সহযোগীসহ তিনি ঢাকার ডিবি পুলিশের হাতে ধরা পড়েন।এরপর জাল পাসপোর্ট তৈরি ও অবৈধভাবে প্রবেশের অভিযোগে দাউদ মার্চেন্টের বিরুদ্ধে মামলা হয়। তখন ডিবি কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, ‘মাফিয়া ডন’ দাউদ ইব্রাহিমের ঘনিষ্ঠ সহযোগী দাউদ মার্চেন্ট। বাংলাদেশে দাউদের নেটওয়ার্ক বিস্তারের জন্য তাকে গোপনে পাঠানো হয়েছিল।ঢাকার ডিবি পুলিশের এক কর্মকর্তা সমকালকে জানান, জাল পাসপোর্ট ও অবৈধভাবে দেশে প্রবেশের মামলায় ২০১৪ সালের ২৯ নভেম্বর দাউদ মার্চেন্ট গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পায়। পরদিন ভোরে ডিবি পুলিশ রাজধানীর খিলগাঁও এলাকা থেকে ৫৪ ধারায় তাকে আবারও গ্রেফতার করে। এরপর রিমান্ড শেষের পর থেকেই তিনি কারাগারে ছিলেন।তিনি আরও জানান, দাউদ মার্চেন্টকে গত ৩ নভেম্বর ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয় ঢাকা মহানগর হাকিম আদালত। দুই দিন পর রোববার বিকেলে তিনি কারাগার থেকে ছাড়া পান।