সাপাহার,নওগাঁ প্রতনিধি:ি নওগাঁয় উপ-সহকারী প্রকৌশলীসহ ৬ কর্মচারীর বিরুদ্ধে
চাঁদাবাজীর অভিযোগ করেছেন নওগাঁ পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ডের বেশ কয়েকজন
গ্রাহক। অভিযুক্তরা হলেন পিডিবি নওগাঁ এর বিক্রয় বিতরণ বিতরণ বিভাগের উপ-
সহকারী প্রকৌশলী লাহেড়ী খান, লাইন সাহয্যকারী ফরিদুজ্জামান ফরিদ, এডিএম
সাহিদুজ্জামান সাঈদ, মোঃ আজাদুর রহমান, মোঃ তরিকুল ইসলাম, আব্দুর রহিম ও
টিটু শেখ। বিষয়টি নিয়ে পিডিবি কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করলেও
কোন প্রকার শাস্তিমূলক ব্যবস্থ্যা ছাড়াই শুধুমাত্র গ্রাহকদের কাছ থেকে নেয়া
চাঁদার টাকাগুলোর আংশিক ফেরত দেয়া হয় এবং গ্রাহকদের মিটার পুনরায়
লাগিয়ে দেয়া হয়। তবে অভিযুক্তদের দাবী অবৈধভাবে লাইন চালানোর অভিযোগেই
মিটারগুলো খুলে নিয়ে আসা হয় এবং প্রভাবশালীদের চাপে সেগুলোর পুঃনসংযোগ
দেয়া হয়।
অভিযোগে বলা হয়, গত বুধবার বিকেলে নওগাঁ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের উপ-
সহকারী প্রকৌশলী লাহেড়ী খানসহ ৬ জনকে সঙ্গে নিয়ে নওগাঁ শহরের উপরশেরপুর
মহল্লায় গিয়ে প্রথমে আরমান আলীর বাড়ির মিটার খুলে ফেলে। এ সময় আরমান
মিটার খুলার কারন জানতে চাইলে লাহেড়ী বলেন, এই লাইনটি অবৈধভাবে চলছে। এর
কারনে বিদ্যুৎ আইনে মামলা করা হবে। মামলা থেকে বাঁচাতে আরমানের কাছে ২৫
হাজা দাবী করেন লাহেড়ী।
অভিযোগে আরও বলা হয় একই গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের বাড়িতে গিয়ে সংযোগ
চালু রাখার বিনিময়ে ২৫ হাজার টাকা দাবী করেন লাহেড়ী ও তার লোকজন। আব্দুর
রাজ্জাক সে টাকা দিতে অস্বিকৃতি জানালে মামলার ভয় দেখানো হয়। এক পর্যায়ে
সহজ সরল আব্দুর রাজ্জাক মামলার ভয়ে সাইদুর রহমানকে ১৭ হাজার টাকা দিয়ে দেন।
শুধু আব্দুর রাজ্জাক নয়; ওই দিন একই গ্রামের সরফদ্দিন আকন্দের ছেলে আরমান
হোসেন, সুরজ প্রামানিকের ছেলে আব্দুস সালাম ও সেকেন্দার আলীর বাড়িতে
গিয়েও একই ধরনের ঘটনা ঘটানো হয়। এ সময় ওই ৬ জন কোন প্রকার অনুমতি
ছাড়াই প্রতিটি বাড়িতে ঢুকে সবকিছু তল্লাশি চালায়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ঘটনার প্রেক্ষিতে ভুক্তভোগী সকলে মিলে পরদিন
বৃহস্পতিবার পিডিবির নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ
করেন। অভিযোগের বিষয়টি জানতে পেরে লাহেড়ী খান গোপনে মিমাংসা করে
মিটার লাগিয়ে দেয়া শর্তে সকলের কাছে স্বাক্ষর নেন। শুধু তাই নয়, অভিযুক্তরা
মিমাংসার কপি বিদ্যুত অফিসের নিন্মমান অফিস সহকারী রফিকুল ইসলামকে
দিয়ে রিসিভ করে দিতে বলেন। কিন্তু রফিকুল ইসলাম নির্বাহী প্রকৌশলীর
অনুমতি নিয়ে রিসিভ করবেন বললে অভিযুক্তদের একজন সাইদুর ও ওই অফিসে কর্মরত
অভিযোগ
তার ভাই স্বপন রফিকুলের উপর চড়াও হয়। এ বিষয়ে রফিকুল ইসলামও নির্বাহী
প্রকৌশলী বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেন।
এ বিষয়ে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সরকারী সকল নিয়ম মেনে আমরা বিদ্যুতের সংযোগ
নিয়ে লাইন চালিয়ে আসছি। আমরা অত প্যাচগোজ বুঝিনা। কে বিদ্যুৎ
অফিসের কমকর্ত আর কে কর্মচারী আমাদের পক্ষে চিনে রাখা সম্ভব নয়। গত
বুধবার হঠাত করেই এমন ভুয়া পরিচয়ে চাঁদা দাবী করার ঘটনা সত্যিই দুঃখ জনক।
ঘটনার শিকার আরেক গ্রাহক আব্দুস সালাম বলেন, লাহেড়ীসহ ওই ৬ জনের
বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হলেও আমাদের আভিযোগ প্রত্যাহার করার স্বর্তে শুধু
মিটারগুলোই লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু দোষিদের কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা
গ্রহন করা হয়নি।
এ বিষয়ে পিডিবি’র নি¤œমান সহকারী রফিকুল ইসলামের সাথে মুঠো ফোনে
কথা বললে তিনি বলেন, উপরশেরপুর এলাকার কিছু গ্রাহক পিডিবির কর্মকর্তার
ভুয়া পরিচয় দিয়ে চাঁদা দাবী করা হয়েছে বলে সাইদুর রহমানের বিরুদ্ধে লিখিত
অভিযোগ করেন আমি নির্বাহী প্রকৌশলী স্যারের অনুমতিক্রমে অভিযোগটি
রিসিভ করি স্বারক নং-৪৫৭। কিন্তু পরদিন সাইদুর ও তার ভাই স্বপন ঘটনাটি
মিমাংসা হয়েছে মর্মে একটি লিখিত কপি রিসিভ করে নিতে বললে নির্বাহী
প্রকৌশলী স্যারের অনুমতিক্রমে রিসিভ করব বললে লাইন হেলপার এডিএম সাইদুর
রহমান ও তার ভাই স্বপন আমার উপর চড়াও হয়। বিষয়টি নিয়ে আমি নির্বাহী
প্রকৌশলী বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেছি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত পিডিবি’র লাইন হেলপার এডিএম সাইদুর রহমানের সাথে
মুঠো ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে লিখিত যে
অভিযোগ করা হয়েছে আপনি ভালো করে পরে দেখেন। আর অভিযোগ যেটাই হোক
সকলে মিলে বসে বিষয়টি সুরাহা করা হয়েছে এবং খুলে নিয়ে আসা মিটারগুলো
পুনরায় লাগিয়ে দেয়া হয়েছে ।
এ বিষয়ে পিডিবি’র টারবাইন এটেনডেন্ট এডিএম সাখাওয়াত হোসেন
স্বপনের সাথে মুঠো ফোনে কথা বললে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ
থাকুক না কেন আপনি সুন্দর করে লিখে দিন।
এ বিষয়ে বিক্রয় বিতরণ বিতরণ বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী লাহেড়ী খানের
সাথে মুঠো ফোনে কথা বললে তিনি বলেন, এটা একটি রহস্যজনক বিষয়। গত
বুধবার বেলা আনুমানিক সাড়ে ৩টায় আমিসহ ৬জন বিদ্যুৎ চুরির অভিযোগে
কয়েকটি বাড়ীর মিটার খুলে নিয়ে আসি এবং তাদের বিরুদ্ধে মামলা করার
সুপারিশ করেছি কিন্তু তাদেও বিরুদ্ধে মামলা না করেই অজ্ঞাত কারনে ওই মিটারগুলি
আবারও লাগিয়ে দিযেছে কর্তৃপক্ষ।
এ ব্যাপারে নওগাঁ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শংকর কুমারের
সাথে মুঠো ফোনে কথা বললে তিনি বলেন, উপরশেরপুর থেকে একটি লিখিত
অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগকারীদের মধ্যে একজন এসে অভিযোগটি
প্রত্যাহারও করেছে। নিম্মমান সহকারী রফিকুল ইসলামও একটি লিখিত অভিযোগ
করেছে। আমি আমার উর্ধতন মহলকে জানিয়েছি এবং বিষয়গুলি তদন্তাধীন
রয়েছে।